Saturday, November 2, 2024
HomeBlogঅবশেষে কোন পথে যাবেন শিলিগুড়ির মহিলারা?

অবশেষে কোন পথে যাবেন শিলিগুড়ির মহিলারা?

নিজস্ব সংবাদদাতা,শিলিগুড়ি ১৭ আগস্ট:”Night is ours”
এই ক্যাচ লাইন কে সামনে রেখেই ময়দানে নেমেছিলেন গোটা বাংলার মহিলারা।

*রাত আমাদেরও*
রাতের পথের দখল নেব আমরা।
আর নিয়েছিলেনও।

১৪ই আগস্ট রাত এক অন্য সংকেত দিয়েছে বাংলায়।

সিঙ্গুর নন্দীগ্রামের আন্দোলনেও আমজনতাকে এভাবে পথে নামতে দেখেননি বাংলা।
কিন্তু তিলোত্তমার চলে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেনি আম বাঙালি।

চোখ দিয়ে ঝর ঝর করে পড়া র*ক্ত হৃদয়ে দাগ টেনে গেছে। আর এই কারণেই তো ১৪ই আগস্টের রাতে কেবল মহিলারাই নয় পথে নেমেছিল পুরুষেরাও। আগামী প্রজন্মকে বাঁচাতে মাঠে নেমেছিল ৮ থেকে ৮০।

কলকাতায় আর জি কর হাসপাতালে তিলোত্তমার মৃত্যুতে কার্যত ক্ষুব্ধ বাংলা। দুর্ভাগ্যজনক এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীও। এই প্রথম কোন ঘটনা নিয়ে তিনি প্রথমেই সিবিআই তদন্ত হলেও আপত্তি নেই বলেই জানিয়েছিলেন।

একই সুর শোনা গিয়েছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর গলাতেও।

কিন্তু সিস্টেমের বিরুদ্ধে পথে নেমেছিল বাংলা।
দোষীর কঠোর শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছিল আমজনতা।

তিলোত্তমা ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ১৪ই আগস্ট রাতে মোমবাতি মিছিলে সামিল হয়েছিলেন মহিলারা। দাবি ছিল একটাই,অভিযুক্তর এমন শাস্তি হোক যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
চাই ফাঁসি।

রাত্রি আমাদেরও এই ক্যাচ লাইন কে সামনে রেখে লড়াইয়ে নামা মহিলারা কিছুটা হলেও বিভ্রান্ত‌ই ১৪ই আগস্ট রাতের পর থেকে।

উত্তরবঙ্গে সর্বপ্রথম শিলিগুড়ির জনা কয়েক মহিলা এই সংগ্রামের দিশারী হয়।
সিস্টেমের বিরুদ্ধে,দোষীর কঠোর শাস্তির দাবিতে ময়দানে নামার সিদ্ধান্ত নেন তারা।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শুরু হয় পোস্ট। ব্যাপক সাড়া পড়ে যায়। রাত্রি আমাদেরও এই নামে তড়িঘড়ি খুলে ফেলা হয় হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ।

Night is ours নামে তিনটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নিমেষের মধ্যে হাজার হাজার মহিলারা যোগদান করতে শুরু করেন।

এরপর ওপেন করে দেওয়া হয় গ্রুপ যে কোন কাউকে যোগদান করানোর জন্য।
এই সময় গ্রুপে যোগদান করতে শুরু করে যুব তরুণ প্রজন্ম। মহিলাদের পাশাপাশি প্রচুর পুরুষেরাও এই গ্রুপে যোগদান করতে শুরু করে।
সাকসেস হয় ১৪ই আগস্ট রাতের প্রতিবাদ মিছিল। শিলিগুড়ির বাঘাযতীন পার্ক থেকে হিলকার্ট রোড হয়ে প্রতিবাদ মিছিল আবার বাঘাযতীন মাঠে এসেই শেষ হবার কথা ছিল। কিন্তু ওই প্রতিবাদ মিছিল হাসমী চকে যেতেই হিলকার্ট রোডে দেখা যায় মশাল মিছিল। ওই মশাল মিছিলে ছিলেন এসএফআই ডিওয়াইএফআইয়ের নেতাকর্মীরা। হাজার হাজার মানুষের ভিড়ে একাকার কাণ্ড। Night is ours গ্রুপ কার্যতঃ হিমশিম খেয়ে যায় সেই সময়। বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন তারা।
তাদের আন্দোলন কি হাইজ্যাক? ওঠে প্রশ্ন।
কোনোমতে হাশমি চকেই প্রতিবাদ মিছিল শেষ করে ঘুরিয়ে আনা হয় বাঘাযতীন মাঠে।
এরপর থেকেই শুরু বিতর্ক।

Night is ours গ্রুপে ওঠে কটুক্তির ঝড়। ১৪ তারিখ রাতের প্রতিবাদ মিছিলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সমর্থকরা থাকলেও কোন ঝান্ডা ব্যবহার করেননি এবং তা করতেও দেননি Night is ours এর শিলিগুড়ির উদ্যোক্তারা। কিন্তু ১৫ই আগস্ট সকাল থেকে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধিকে নিয়ে কুন্তব্য করতে শুরু করেন অনেকেই। উল্টে দাও পাল্টে দাও সহ এমনও কিছু কিছু মন্তব্য ওই গ্রুপে উঠতে শুরু করে যা আইন-শৃঙ্খলা জনিত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে বলেই চিন্তায় ফেলে দেয় গ্রুপের ১৪ জন এডমিনকে। নিমেষের মধ্যে ওই গ্রুপ এডমিন অনলি করে দেওয়া হয়।

বারবার এডমিনদের তরফ থেকে আপত্তিকর মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করা হয় গ্রুপের সকলকে।
কিন্তু খু*নের বদলা খু*ন, ধ*র্ষণের বদলা ধ*র্ষণ , এমন মন্তব্যও করে বসেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান
Night is ours এর শিলিগুড়ির উদ্যোক্তারা।

এডমিনরা গ্রুপে দফায় দফায় সতর্কীকরণ এর এসএমএস করতে থাকেন। এরপর আবার খুলে দেওয়া হয় গ্রুপ সবার জন্য।

কিন্তু আবার সেই একই পরিস্থিতি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার থেকে শুরু করে শাসক বিরোধী নানান স্লোগানে উত্তপ্ত হতে থাকে গ্রুপ। আবার এডমিন অনলি।
এভাবেই ১৫ তারিখ কেটে যায়। ১৬ তারিখ আবার খুলে দেওয়া হয় গ্রুপ সকলের জন্য। কিন্তু সেখানে আইন ভেঙে অনেকেই নির্যাতিতার ছবি পোস্ট করা থেকে শুরু করে নানান রকম অডিও ক্লিপ পোস্ট করতে শুরু করেন। বিষয়টি নিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে Night is ours এর প্রতিনিধিদের।

এমনিতেই গ্রুপটির ওপর প্রথম থেকেই স্ক্যানার ছিল প্রশাসনের।
উদ্যোক্তারা কোনমতেই চাইছিলেন না এই গ্রুপটি কোন রাজনৈতিক দল মুনাফার জন্য ব্যবহার করুক। উদ্যোক্তাদের দাবি ছিল একটাই,মানুষ হিসাবে সবাই থাকুক,প্রতিবাদে সরব হোক সবাই।

কিন্তু আল্টিমেটলি গ্রুপটি চলে যায় রাজনৈতিক বক্তব্য পোষণের প্লাটফর্মে। নানান রকম রাজনৈতিক বক্তব্য পোষণ করতে থাকেন গ্রুপে থাকা সদস্যরা।

এখানেই ভাঙন শুরু।
গ্রুপ এডমিনরা বারবার রাজনৈতিক বক্তব্য পোষণ থেকে বিরত থাকার অনুরোধ করতে থাকেন। তারা বলেন,দোষীর শাস্তি হোক এই দাবিতে আন্দোলন,কোন রাজনৈতিক দলের হয়ে প্রচার বা প্রতিবাদ গ্রুপে নয়।
কিন্তু কিছু মানুষ গ্রুপটিকে রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম বানিয়ে ফেলে। আবার এডমিন অনলি করে দেওয়া হয় গ্রুপ ১৬ তারিখ। ১৬ তারিখ শিলিগুড়ির সূর্যসেন মাঠেও জমায়েত হওয়ার কথা ছিল গ্রুপ এডমিন এবং সদস্যদের, কিন্তু ভেস্তে যায় তা। পারিবারিক নানান সমস্যার কথা জানিয়ে বৈঠকে যোগদান করেননি অনেকেই। কার্যত দিশেহারা গ্রুপ এডমিনরা।

Night is ours গ্রুপ তৈরি করা হয়েছিল অভিযুক্তের শাস্তির দাবিতে আওয়াজ তোলার জন্য, কিন্তু গ্রুপটা দখল করে নেয় শাসক বিরোধীরা। আর এখানেই উলটপালট হয়ে যায় সবকিছুই।

তাহলে night is ours এর ভবিষ্যৎ কী?
তাহলে কি থমকে গেল এই গ্রুপ?
প্রশ্ন উঠছে তাহলে ১৪ জন এডমিন কি আখেরে রাজনৈতিক চাপে প্রতিবাদ থেকে সরে আসছেন?

“রাত আমাদেরও” এই ক্যাচ লাইনকে সামনে রেখে গোটা রাজ্য জুড়ে আন্দোলনের নামে মহিলারা আখেরে কি নিজেরা অর্থাৎ শুধু মহিলারাই একলা চলো নীতিতেই ময়দানে নামবেন?
এখন সে দিকে তাকিয়েই বাংলা।

RELATED ARTICLES

Most Popular

Recent Comments